উচ্চ মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র

(HSC Biology 2nd Paper )


দশম অধ্যায় : মানবদেহের প্রতিরক্ষা (ইমিউনিটি)

(Chapter 10. Defense System of Human Body (Immunity):


মানবসমাজ বাসস্থান ও পরিবেশে থেকে নানা ধরনের রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণুর সংস্পর্শে আসে। দেহের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এসব জীবাণুর বিভিন্ন পযার্য়ের দেহে প্রবেশকে প্রতিহত করে। দেহের সব রকম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা যা ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী ও অন্যান্য জীবাণুর আক্রমণ থেকে মানুষকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে তার সম্পর্কে সংক্ষেপে এ ইউনিটে আলোচনা করা হয়েছে।

পাঠ-১০.১ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা


শিখনফল
♦ মানবদেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে।
প্রধান শব্দ ইমিউনিটি, লাইসোজাইম, ইন্টারফেরন

মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ, কলা ও কোষ নিয়মতান্ত্রিকভাবে একত্রে দেহের প্রতিরক্ষা (defence) ব্যবস্থাপনায় কোন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, পরজীবী ও অন্যান্য জীবাণুর আক্রমণ থেকে মানুষকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাকে বলা হয় ইমিউনিটি (immunity)। দেহের বিভিন্ন অঙ্গ, কলা ও কোষ সমন্বয়ে গঠিত যে তন্ত্র দেহকে রোগাক্রমণের হাত থেকে এবং রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করে তাকে ইমিউন তন্ত্র (immune system) বলা হয়। রোগ প্রতিরোধে ইমিউনিটির প্রধান উদ্দেশ্য তিন প্রকারের। যথা-
১। অণুজীবদের (microorganisms)বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা,
২। দেহের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে শনাক্ত করা ও প্রতিস্থাপিত করা এবং
৩। পরিত্যক্ত বা নষ্ট কোষগুলোকে শনাক্ত করা এবং তাদের ধ্বংস করা।মানবদেহে প্রধাণত লিস্ফয়েড অঙ্গ ও শ্বেত রক্ত কণিকাগুলো দেহের প্রতিরক্ষার কাজে অংশ গ্রহণ করে থাকে। ইমিউন তন্ত্রের লিস্ফয়েড অঙ্গগুলো প্রাথমিক বা মুখ্য ও গৌন অঙ্গ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।


১। প্রাথমিক বা মুখ্য লিস্ফয়েড অঙ্গ (Primary lymphoid organs)
ক. লসিকা গ্রন্থি (Lymph nodes): লসিকা বহনকারী লসিকানালির স্বল্প ব্যবধানে বহু গোলাকার বা ডিম্বাকার স্ফীত অংশ থাকে, এদের লসিকা গ্রন্থি বা লসিকা পর্ব বলে। দেহের প্রায় সর্বত্র বিস্তৃত, তবে ঘাড়ে, বগলে, কুঁচকিতে লসিকা গ্রন্থির পরিমাণ বেশি।
খ. লসিকা (Lymph): লসিকা বর্ণহীন ও রক্তের ন্যায় এক ধরনের যোজক কলাবিশেষ। লসিকানালির মধ্য দিয়ে ঈষৎ ক্ষারধর্মী যে তরল যোজক কলা বা লসিকা প্রবাহিত হয় তাই লসিকা।
গ. লসিকানালি (Lymphatic vessels): দেহের সর্বত্র বিস্তৃত নালিকা যেগুলো লসিকা পরিবহন করে।
ঘ. থাইমাস গ্রন্থি (Thymus gland): শ্বাসনালির পিছনে অবস্থিত গ্রন্থি।
ঙ. অস্থিমজ্জা (Bone marrow): অস্থি গহ্বরে অবস্থিত লোহিত বর্ণের নরম ও চর্বিযুক্ত কলা।

২। গৌন লিস্ফয়েড অঙ্গ (Secondary lymphoid organs):
ক. প্লিহা (Spleen): উদর গহ্বরে পাকস্থলীর পাশে অবস্থিত লালচে বর্ণের মুষ্ঠি আকারের গঠন।
খ টনসিল (Tonsils): গলার পিছনের দিকে অবস্থিত দুটি ডিম্বাকার গঠন।
গ. পেয়ার প্যাচ (Peyer’s patches): ক্ষুদ্রান্ত্রে বিদ্যমান বিশেষ ধরনের লসিকা কলা।

দেহের রোগ মুক্তিতে ইমিউন তন্ত্র রস নির্ভর ও কোষ নির্ভর সহজাত প্রতিরক্ষা সৃষ্টি করে। ইমিউন তন্ত্র দেহের রস নির্ভর সহজাত প্রতিরক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
১। কমপ্লিমেন্ট- ১১টির বেশী সিরাম প্রোটিনের সমন্বয়ে জীবাণু সংক্রমন রোধে কাজ করে।
২। লাইসোজাইম- ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর ধবংস করে।
৩। ইন্টারফেরন- এক ধরনের প্রোটিন যা ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি ব্যাহত করে।

ইমিউন তন্ত্র সহজাত ও অর্জিত প্রতিরক্ষায় অংশগ্রহণকারী কোষগুলো-
১। দেহের বিভিন্ন ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা কোষগুলো সহজাত প্রতিরক্ষায় জড়িত। সেগুলো হলো-
ক. গ্রানুলার লিউকোসাইট (Granular leukocytes): রক্তে অবস্থিত নিউট্রোফিল, ইওসিনোফিল ও বেসোফিল।
খ. মনোনিউক্লিয়ার ফ্যাগোসাইট (Mononuclear phagocytes): দু’রকমের দেখা যায়। যথা- মনোসাইট এবং ম্যাক্রোফেজ। মনোসাইট রক্তে অবস্থিত এক প্রকার শ্বেতকণিকা। এরা ফ্যাগাসাইটোসিস পদ্ধতিতে দেহে প্রবিষ্ট রোগজীবাণুকে ধ্বংস করে। ম্যাক্রোফেজ (macrophage) কোষ বিভিন্ন রকমের হয়। যথা- যকৃতের কুফার কোষ, অ্যালভিওলার ম্যাক্রোফেজ (alveolar macrophage), অস্টিওক্লাস্ট (osteoclast), যকৃতের মেসেঞ্জিয়াল কোষ (meessengial cell), মস্তিষ্কের মাইক্রোগিড়য়াল কোষ (microglial cell) ইত্যাদি।
গ. নাল কোষ (Null cell): বিশেষ ধরনের লিস্ফোসাইট বা কিলার সেল বা ন্যাচারাল কিলার সেল (N.K. cell) নামে পরিচিত।

২। দেহের যেসব কোষ অর্জিত প্রতিরক্ষায় জড়িত সেগুলো হলো-
ক. B-লিস্ফোসাইট (B-lymphocyte) কোষ অ্যান্টিবডির মাধ্যমে রস নির্ভর প্রতিরক্ষা সৃষ্টি করে।
খ. T-লিস্ফোসাইট (T-lymphocyte) অ্যান্টিবডির মাধ্যমে কোষ নির্ভর প্রতিরক্ষা দিয়ে থাকে।


সারসংক্ষেপ

মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গ, কলা ও কোষ নিয়মতান্ত্রিকভাবে একত্রে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনায় কোন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, পরজীবী ও অন্যান্য জীবাণুর আক্রমণ থেকে মানুষকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাকে বলা হয় ইমিউনিটি। রোগ প্রতিরোধে ইমিউনিটির প্রধান উদ্দেশ্য তিন প্রকারের। ইমিউন তন্ত্রের লিস্ফয়েড অঙ্গগুলো প্রাথমিক ও গৌন অঙ্গ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রাথমিক বা মুখ্য লিস্ফয়েড অঙ্গ- লসিকা গ্রন্থি, লসিকা, লসিকানালি, থাইমাস গ্রন্থি ও অস্থিমজ্জা। গৌন লিস্ফয়েড অঙ্গ- প্লিহা, টনসিল ও পেয়ার প্যাচ।

পাঠ-১০.২ প্রতিরক্ষার স্তরসমূহ


শিখনফল
♦ মানবদেহের প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর হিসেবে ত্বকের কাজ বিশ্লেষণ করতে পারবে।
♦ খাদ্যদ্রব্যের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার ক্ষেত্রে পরিপাক নালীর এসিড ও এনজাইমের ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে পারবে।
♦ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে ম্যাক্রোফেজ (Macrophage) ও নিউট্রোফিল (Neutrophil) এর ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে পারবে।

প্রধান শব্দ: মেলানিন, ম্যাক্রোফেজ

আমাদের চারপাশে রয়েছে অসংখ্য জীবাণুর বসবাস। এ জীবাণুদের মধ্যে একটি অংশ আমাদের দেহে রোগ সৃষ্টি করে থাকে। অসংখ্য জীবাণুদের মাঝে বসবাস করেও আমরা কিন্তু সুস্থ থাকি। কারণ আমাদের দেহে রয়েছে তিন স্তরের রোগ প্রতিরোগ ব্যবস্থা। রোগজীবাণু কিংবা পরজীবী আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য মানবদেহে সাধারণভাবে তিন ধরনের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা লক্ষ করা যায়।


প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর

এ প্রতিরক্ষার প্রথম স্তরে নিম্নলিখিত উপাদানগুলো জীবাণু প্রতিরোধ করে থাকে-

১। ত্বক (Skin): ত্বক দেহে অণুজীব প্রবেশের প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। ত্বকীয় গ্রন্থি নিঃসৃত ঘাম ও তৈল ব্যাকটেরিয়ার জন্য বিষস্বরূপ। তাকে বিদ্যমান মিথোজীবী অণুজীব সংক্রামক অণুজীব প্রতিরোধ করে।

২। সিলিয়া ও মিউকাস (Cilia and Mucus):
শ্বাসনালিতে বিদ্যমান সিলিয়া ও মিউকাস অবিরাম ধূলিকণা ও অণুজীবদের হাঁচি (sneezing)) ও কাশির (Coughing)) মাধ্যমে বের করে দেয়।

৩। এসিড (Acid) :
পাকস্থলীতে বিদ্যমান হাইড্রোক্লোরিক এসিড (HCl) খাদ্যের সঙ্গে আগত বিভিন্ন অণুজীব ধ্বংস করে। যোনিতে বিদ্যমান মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া ল্যাকটিক এসিড উৎপন্ন করে অণুজীবের সংক্রমণ রোধ করে।

৪। লাইসোজাইম এনজাইম (Lysozyme enzyme):
লালা, অশ্রু, মূত্র ও ঘামে বিদ্যমান লাইসোজাইম এনজাইম দেহে আগত অধিকাংশ ক্ষতিকর অণুজীব ধ্বংস করে।

৫। রক্ত জমাট (Blood clotting):
ক্ষতস্থানে দ্রুত রক্ত তঞ্চন ঘটে দেহে অণুজীব প্রবেশ রোধ করে। সিলেবাস অন্তর্ভুক্ত এই প্রতিরক্ষা স্তরে দেহের ত্বক, পরিপাকনালির এসিড এবং এনজাইমের ভূমিকা উল্লেখ করা হলো-

প্রতিরক্ষায় ত্বকের ভূমিকা-
ত্বক প্রথম স্তরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ত্বক দেহকে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি এবং প্রভাবে সৃষ্ট রোগ (ক্যান্সার) হতে দেহকে রক্ষা করে। ত্বকের এপিডার্মিসের কোষে মেলালিন (melanine)) জাতীয় পদার্থ সৃষ্টি হয় যা অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে। ত্বক দেহের বাইরের স্তরে দৃঢ় ও কেরাটিনাইজড (keratinized) আবরণী তৈরি করে, যা দেহের সকল বাহ্যিক অংশকে আচ্ছাদিত করে এবং ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে একটি ফলপ্রসূ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। দেহত্বক ছিঁড়ে গেলে বা কেটে গেলে ত্বকে অবস্থিত হিস্টিওসাইট (ম্যাক্রোফেজ) জীবাণু ধ্বংস করে দেহকে প্রতিরক্ষা দান করে। ঘাম ও তৈল গ্রন্থির নিঃসরণ ত্বকের উপরিভাগের pH-কে অম্লীয় (pH= 3-5) করে তোলে, ফলে অণুজীবসমূহ বেশি সময় ত্বকে বেঁচে থাকতে পারে না। কিছু সংখ্যক উপকারী ব্যাকটেরিয়া ত্বকে অবস্থানকালে এসিড ও বিপাকীয় বর্জ্য নিঃসরণ করে, যা অণুজীবের সংখ্যাবৃদ্ধিকে বাঁধা দেয়। ঘাম নিঃসৃত লবণ ও ফ্যাটি এসিডে অবস্থিত লাইসোজাইম (lysozyme) ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীরকে ধ্বংস করে। অশ্রুগ্রন্থি নিঃসৃতেও লাইসোজাইম থাকে যারা চোখে জীবাণুর সংক্রমণ প্রতিহত করে।

খাদ্যদ্রব্যের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে পরিপাকনালির এসিড ও এনজাইমের ভূমিকা-
লালারসের লাইসোজাইম এনজাইম খাদ্য-পানীয়তে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। লালারসের অবিরাম ক্ষরণে মুখের অভ্যন্তরে বা দাঁতে খাদ্যকণা সঞ্চিত হতে পারে না, ফলে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে। আর যেসব ব্যাকটেরিয়া লালারস দ্বারা ধ্বংস হয় না তারা পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত HCl এসিড দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পাকস্থলীরসে অতি অল্পমাত্রায় বিদ্যমান লাইসোজাইমও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে থাকে।


দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা স্তর

শ্বেত রক্তকণিকা থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন ধরনের ফ্যাগোসাইটিক কোষ (ম্যাক্রোফেজ, নিউট্রোফিল ইত্যাদি), প্রদাহ সৃষ্টিকারী সাড়া (inflammatory response) ও দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রভৃতি দেহে দ্বিতীয় স্তরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে।


ফ্যাগোসাইটিক কোষ-
দেহের প্রথম স্তরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কোনো কারণে অকার্যকর হয়ে পড়লে ব্যাকটেরিয়া ত্বকের ক্ষতস্থান দিয়ে দেহে প্রবেশের সুযোগ পায়। এক্ষেত্রে ক্ষতস্থানের সূক্ষ্ম রক্তনালিকাগুলোর প্রসারণের ফলে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। কৈশিক জালিকার ভেদ্যতা বৃদ্ধির ফলে ফ্যাগোসাইটগুলো (ম্যাক্রোফেজ, নিউট্রোফিল, মনোসাইট ইত্যাদি) আন্তঃকোষীয় ফাঁকে বের হয়ে আসে এবং অনুপ্রবেশকৃত ব্যাকটেরিয়াকে গলাধঃকরণ করে।


প্রদাহ সৃষ্টিকারী সাড়া-
সংক্রমিত স্থানে উৎপন্ন পুঁজ (pus) হচ্ছে রক্তরসে অবস্থিত মৃত কোষ, নিষ্ক্রিয় ব্যাকটেরিয়া ও ফ্যাগোসাইটের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষ। ফ্যাগোসাইটোসিসের (phagocytosis) পরিণতি প্রকাশ পায় যখন সংক্রমণের স্থানটি গাঢ় লাল বর্ণের হয়ে স্ফীত হয়। রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ত্বকের ওই অঞ্চলে লালচে ভাব ফুটে ওঠে। লসিকাবাহিত ব্যাকটেরিয়া ও ফ্যাগোসাইট লসিকা গ্রন্থিতে ব্যাকটেরিয়াগুলোকে গলাধঃকরণের মাধ্যমে নিষ্কাষিত করে। লিম্ফোসাইট ও ক্ষতিগ্রস্থ কলা নিঃসৃত হিস্টামিন (histamin) এরপ প্রভাবে রক্তের কৈশিক জালিকা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং প্রদাহ সৃজনক্ষম প্রতিক্রিয়া (inflammatory response) দেখা যায়।


দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি-
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেহের বৃদ্ধিপ্রাপ্ত তাপমাত্রা হচ্ছে অণুজীব ও শ্বেতকণিকার মধ্যকার সংঘর্ষের বহিঃপ্রকাশ। এ ধরনের প্রদাহ অধিকতর বিস্তৃত এবং একে Systemic reaction বলে। উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর শুধু জীবাণুর বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে তা নয়, কখনো কখনো এরা আসলে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও ক্রিয়াশীল করে তোলে বটে, অবশ্য যদি না তা অতিরিক্ত পর্যায়ের অসুবিধা ঘটায়। এক্ষেত্রে দুটি কারণে জ্বর হয়ে থাকে। প্রথমত রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীব দ্বারা নিঃসৃত বিষক্রিয়া, দ্বিতীয়ত পাইরোজেন নামক রাসায়নিক পদার্থ (fever producing substance) যা শ্বেতকণিকা থেকে নিঃসৃত হয়ে থাকে।


ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে ম্যাক্রোফেজ ও নিউট্রোফিলসের ভূমিকা
মাক্রোফেজ (Macrophage)- ম্যাক্রোফেজ বিশেষ প্রকার শ্বেতকণিকা, যা মনোসাইট (monocyte) থেকে উৎপন্ন হয়। মনোসাইট রক্তের বাইরে বৃহদাকার ধারণ করে ম্যাক্রোফেজে পরিণত হয়। রেটিকিউলো এন্ডোথেলিয়াল সিস্টেম (Reticulo-endothelial system) বা মনোনিউক্লিয়ার ফ্যাগোসাইট সিস্টেমের (Mononuclear phagocyte system)ভিতর (যেমন- অস্থিমজ্জা, যকৃৎ, প্লিহা, লিষ্ফ নোড ও সাইনাসের ভিতর) ম্যাক্রোফেজ ঘুরে বেড়ায়। এমনকি ভ্রাম্যমাণ কোষ (wandering cells) হিসেবেও এরা কলার ভিতর বিচরণ করতে পারে। যেমন- কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ভিতর মাইক্রোগ্লিয়া (microglia), যকৃৎ রক্তনালির ভিতর কুফার কোষ (Kuffer cell), যোজক কলার মধ্যে আবদ্ধ হিস্টিওসাইট বিভিন্ন প্রকার ম্যাক্রোফেজ।


এধরনের কোষ, জীবাণুকে ফ্যাগোসাইটোসিস (phagocytosis) পদ্ধতিতে আত্মাসাৎ করে জীবাণু ধ্বংস করতে পারে। এটা ছাড়াও B ও T লিষ্ফোসাইটকে উদ্বুদ্ধ করে অনাক্রম্যতামূলক সক্রিয়তা সৃষ্টি করতেও সক্ষম। এ কারণে ম্যাক্রোফেজকে ইমিউনিটি সৃষ্টির প্রাথমিক উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়। ম্যাক্রোফেজগুলো প্রাথমিকভাবে দেহে প্রবিষ্ট জীবাণুকে ভক্ষণ করে ধ্বংস করে। তা ছাড়াও ইমিউনিটি সৃষ্টিতে এরা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। দেহত্বক ভেদ করে রোগ জীবাণু কোষ কলায় পৌঁছানো মাত্রই প্রতিক্রিয়া হিসেবে সেখানে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। ফলে দেহের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধীরে ধীরে উক্ত প্রদাহস্থলে ম্যাক্রোফেজ এসে জড়ো হতে থাকে। ম্যাক্রোফেজ কর্তৃক উৎপাদিত প্রোটিন দু’ভাবে ব্যাকটেরিয়ার আকমণ প্রতিহত করে। যেমন-


(ক) ভৌত পদ্ধতিতে:
ম্যাক্রোফেজ ব্যাকটেরিয়ার দেহ প্রাচীরে গর্ত বা ছিদ্র করে ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে।


(খ) ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায়:
যে প্রক্রিয়ায় শ্বেত রক্ত কণিকাসমূহ অণুজীব ভক্ষণ করে তাকে ফ্যাগোসাইটোসিস বলে। ম্যাক্রোফেজ ব্যাকটেরিয়ার দেহের বাইরের দিকে আঠার মতো লেগে থেকে অন্যান্য ম্যাক্রোফেজকে ফ্যাগোসাইটোসিসের জন্য আহ্বান জানাতে থাকে। ম্যাক্রোফেজ কর্তৃক ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু নিধন চারটি পর্যায়ক্রমিক ধাপে সম্পন্ন হয়।


১. কেমোট্যাক্সিস:
প্রথমে ম্যাক্রোফেজ কেমোট্যাক্সিস প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে আক্রান্ত স্থানে উপস্থিত হয়।


২. সংলগ্নীকরণ: অতঃপর ব্যাকটেরিয়া ও ম্যাক্রোফেজ নিকটবর্তী হয়ে পাশাপাশি অবস্থান করে। একে সংলগ্নীকরণ বলা হয়। ম্যাক্রোফেজের প্লাজমা আবরণীর কিছু রাসায়নিক গ্রাহক পদার্থ অণুজীবদের সাথে সংযুক্ত হয়ে ফ্যাগোসাইটিক প্রক্রিয়া শুরু করে।


৩. গ্রাসকরণ:
ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় ম্যাক্রোফেজ ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য রোগ জীবাণুকে দেহাভ্যন্তরে টেনে নেয় বা গ্রাস করে। অর্থাৎ এ সময়ে ম্যাক্রোফেজ অণুজীবের চারদিকে ক্ষণপদ সৃষ্টি করে এটিকে ঘিরে ফেলে এবং পরিশেষে ইনভ্যাজিনেশন প্রক্রিয়া সাইটোপ্লাজমের ভিতরে নিয়ে আসে। এ প্রক্রিয়াকে ইনজেশন বা গ্রাসকরণ বা ভক্ষণ বলে। দেহাভ্যন্তরে প্রবেশের পর জীবাণুর এ দশাকে ফ্যাগোসোম (phagosome) বলে।


৪. হত্যা ও পরিপাক:
ফ্যাগোসোম ম্যাক্রোফেজের সাইটোপ্লাজমে উপস্থিত লাইসোজাইম (lyozyme) এনজাইমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ফ্যাগোলাইসোজোম (phagolysome) তৈরি করে। ফ্যাগোলাইসোজোম তৈরি হওয়ায় ১০-৩০ মিনিটের মধ্যে উক্ত এনজাইমের প্রভাবে ব্যাকটেরিয়ার মৃত্যু ঘটে। অতঃপর মৃত ব্যাকটেরিয়ার অন্তঃকোষীয় পরিপাক (যেমনলাইেসাজাইম, লাইপেজ, নিউক্লিয়েজ ও গ্লাইকোলাইসিস প্রভৃতির ক্রিয়ার পরিপাক) সম্পন্ন হয় এবং অপাচ্য অংশ বাইরে নিষ্ক্রান্ত হয়।


ম্যাক্রোফেজের ইমিউনিটিতে সাড়াদান

ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ভক্ষণ ছাড়াও ম্যাক্রোফেজ B ও T লিষ্ফোসাইটকে উদ্বুদ্ধ করে ইমিউনিটি মূলক সক্রিয়তা সৃষ্টি করতে সক্ষম। এ কারণে ম্যাক্রোফেজকে ইমিউনিটি সৃষ্টির প্রাথমিক উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়। আমাদের দেহের প্রতিটি কোষের প্লাজমা পর্দায় MHC (Major Histocompatibility Complex) নামক প্রোটিন থাকে। ম্যাক্রোফেজ নিজের MHC প্রোটিনের দেহের অন্যান্য কোষের MHC প্রোটিনের তুলনা সাপেক্ষে আপন কোষগুলোকে শনাক্ত করতে পারে।


বহিরাগত কোনো জীবাণু দেহে প্রবেশ করলে প্রোটিনের উপস্থিত সাপেক্ষে ম্যাক্রোফেজ তাদের চিনতে পারে। ভাইরাস ও অন্যান্য বহিরাগত বিষাক্ত পদার্থও এদের দ্বারা চিহ্নিত হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, MHC প্রোটিন MHC জিন দ্বারা সংশ্লেষিত হয় এবং আঙুলের ছাপের মতো একজনের MHC প্রোটিনের সঙ্গে অপরের প্রোটিনের কোনো মিল পাওয়া যায় না। বহিরাগত জীবাণু, পরজীবী কোষ বা ভাইরাস প্রভৃতি ম্যাক্রোফেজের সংস্পর্শে এলে ম্যাকোফেজ হতে ইন্টারলিউকিন-1 (interleukin-1) নামক প্রোটিন নিঃসৃত হয় এবং উহার প্রভাবে লিষ্ফোসাইট কোষগুলো উদ্বুদ্ধ হয়ে অনাক্রম্যতাজনিত সাড়া জাগায়। এছাড়া ম্যাক্রোফেজ কর্তৃক ভক্ষিত হয়ে জীবাণু পাচিত হলে উহার কিছু প্রোটিন (অ্যান্টিজেন) ম্যাক্রোফেজের প্লাজমা পর্দায় MHC প্রোটিনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে বাইরে উন্মুক্ত হয়। এ অবস্থায় এটি লিষ্ফোসাইট কর্তৃক চিহ্নিত হয় ও সক্রিয় হয়ে ওঠে।


নিউট্রোফিলস ইমিউনিটিতে সাড়াদান
নিউট্রোফিল মানবদেহের সহজাত রোগ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এক অত্যাবশ্যকীয় অংশ। মানুষের রক্তে যে শ্বেত রক্তকণিকা সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় তা হলো নিউট্রোফিল (৬০-৭০%)। নিউট্রোফিল প্রধাণত তিন ধরনের প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া নিধন করে। যথা


১। ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায়:
ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে ফ্যাগোসাইটিক নিউট্রোফিলস কলাকোষের মধ্য দিয়ে দেহের যেকোনো অংশে প্রবেশ করতে পারে এবং ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। এ কাজে লিষ্ফোসাইট থেকে নিঃসৃত হরমোন সৃদশ রাসায়নিক পদার্থ, যেমন- ইন্টারলিউকিন, লিউকোট্রিন প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসব রাসায়নিক পদার্থকে সাইটোকাইনস (cytokines) বলে। সাইটোকাইনসের প্রভাবে রক্ত নালিকা প্রসারিত ও ছিদ্রময় হয়ে ওঠে। ফলে নিউট্রোফিল এসব ছিদ্র দিয়ে রক্ত জালিকায় অন্তরাবরণীয় আস্তরণের যেকোনো একটি সংযোগস্থলের মধ্য দিয়ে এ কোষগুলো মুহূর্তে তাদের প্রোটোপ্লাজমীয় ক্ষণপদ (pesudopodium) প্রবেশ করিয়ে দেয় এবং প্রোটোপ্লাজমের অর্ধতরল পদার্থকে ক্ষণপদের দিকে ঠেলে দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে নিষ্ক্রান্ত হয়।
এ পদ্ধতিতে খুব কম সময়ের (প্রায় ১মিনিট) মধ্যেই অসংখ্য রক্ত কণিকা রক্ত প্রবাহ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। দেহের যে অংশে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে সেখানে পৌঁছেই তারা বিপদাপন্ন অঞ্চলকে ঘিরে ফেলে এবং ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে শুরু করে। প্রতিটি কোষ প্রায় ১৫-২০টি রোগ জীবাণু গ্রাস করতে সক্ষম। এদের জীবন্ত অবস্থায়ই তারা গ্রাস করে।


২। প্রোটিওলাইটিক এনজাইম দ্বারা:
ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে ব্যাকটেরিয়া ছাড়াও নিউট্রোফিল প্রোটিওলাইটিক এনজাইম (যেমন- লেকটোফেরিন, লাইসোজাইম, কোলাজিনেজ, ক্যাথিলিসিডিন ইত্যাদি) নিঃসরণ করে যা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় গিলে ফেলা জীবাণুর (ফ্যাগোসোম) সঙ্গে মিশে গিয়ে ফ্যাগোলাইসোজোম তৈরি হয়, যেখানে রোগজীবাণু মারা পড়ে বা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।


৩। ভৌত পদ্ধতিতে :
এ পদ্ধতিতে নিউট্রোফিল রক্ত নালির মধ্যে DNA গঠনের অনুরূপ জালকাকৃতির এক ধরনের বহিঃকোষীয় ফাঁদ (Neutrophil Extracellular Traps-NETs) তৈরি করে ব্যাকটেরিয়াকে নিধন করে। নিউট্রোফিল, প্রোটিন (সিরাইন প্রোটিয়েজ) ও ক্রোমাটিনের সমন্বয়ে গঠিত উক্ত জালে ব্যাকটেরিয়া আটকা পড়ার পর সেখানেই তাদের মৃত্যু ঘটে। অর্থাৎ এ পদ্ধতি ভৌত উপায়ে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করে।


তৃতীয় প্রতিরক্ষা স্তর (Third line of defence)

ইমিউনিটি জনিত সাড়া (immune response) তৃতীয় স্তরীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অন্তর্গত এবং এটি নির্দিষ্টভাবে (In specific) প্রতিরক্ষা প্রদান করতে পারে। অর্থাৎ বিশেষ বিশেষ জীবাণু বা পরজীবীর বিরুদ্ধে কিংবা বিশেষ কোনো অ্যান্টিজেন প্রতিরোধের জন্য এই ব্যবস্থায় ভিন্ন রকমের প্রতিহত পন্থা দেখা যায়।


১। সহজাত ইমিউনিটি (inborn or innate or natural immunity):
যে ইমিউনিটি জন্মের সময় থেকে বংশ পরম্পরায় সঞ্চালিত হয় এবং দেহের সাধারণ ও স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম, তাকে সহজাত ইমিউনিটি বলে। এ রকম ইমিউনিটি জন্মগত। এটি বিশেষ কোনো রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট নয়। এটি দেহের সাধারণ ও স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা, যা জন্ম থেকেই রোগ বা জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকরী। উদাহরণ- ত্বক, মিউকাস পর্দা, পাকস্থলীর আম্লিক pH, ক্ষরিত লালারস, চোখের পানি, শ্বসনতন্ত্রের সিলিয়া, রক্ত কণিকা (ম্যাক্রোফেজ ও নিউট্রোফিল) প্রভৃতি দ্বারা এই ইমিউনিটি রোগ বা জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে।


২। জিনগত ইমিউনিটি (genetic immunity):
জিনগত গঠনের ভিত্তিতে এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা সৃষ্টি হয় বলে এটিকে বংশগত বা জিনগত ইমিউনিটি বলা হয়। এই ইমিউনিটি বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আংশিকভাবে বা জীবাণুর সম্পূর্ণভাবে পোলিও, হাম, কলেরা, আমাশয়, ভাইরাসজনিত পক্ষাঘাত, মাম্পস, সিফিলিস প্রভৃতিকে রোধ করতে পারে। শিক্ষার্থীর কাজ নিচের ছকে ম্যাক্রোফেজ ও নিউট্রোফিল-এর মধ্যকার পার্থক্যগুলো লিখুন। ম্যাক্রোফেজ নিউট্রোফিল


সারসংক্ষেপ
রোগ জীবাণু কিংবা পরজীবী আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য মানবদেহে সাধারণভাবে তিন ধরনের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা লক্ষ করা যায়। প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর- ত্বক, সিলিয়া ও মিউকাস, এসিড, লাইসোজাইম এনজাইম ও রক্ত জমাট। দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা স্তর- শ্বেত রক্তকণিকা থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন ধরনের ফ্যাগোসাইটিক কোষ (ম্যাক্রোফেজ, নিউট্রোফিল ইত্যাদি), প্রদাহ সৃষ্টিকারী সাড়া ও দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রভৃতি দেহে দ্বিতীয় স্তরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ম্যাক্রোফেজ কর্তৃক উৎপাদিত প্রোটিন দু’ভাবে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করে। যেমন- ভৌত পদ্ধতি ও ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়া। ম্যাক্রোফেজ কর্তৃক ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু নিধন চারটি পর্যায়ক্রমিক ধাপে সম্পন্ন হয়। যথা- কেমোট্যাক্সিস, সংলগড়বীকরণ, গ্রাসকরণ ও হত্যা এবং পরিপাক। নিউট্রোফিলস প্রধাণত তিন ধরনের প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া নিধন করে। যথা- ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়া, প্রোটিওলাইটিক এনজাইম দ্বারা ও ভৌত পদ্ধতি।






প্রধান শব্দভিত্তিক সারসংক্ষেপ

♦ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা: জীবাণুর আক্রমণ থেকে আমাদের দেহকে রক্ষা করার ব্যবস্থাকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বলে। আমাদের দেহে তিন স্তরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।

♦ ম্যাক্রোফেজ: ম্যাক্রোফেজ নামে বিশেষ এক ধরনের কোষ থাকে যারা রোগ-জীবাণুকে খেয়ে ফেলে।

♦ অ্যান্টিজেন: যে রাসায়নিক পদার্থ এন্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করে তাকে অ্যান্টিজেন বলে।

♦ অ্যান্টিবডি: অ্যান্টিবডি হলো এক প্রকার প্রোটিন জাতীয় পদার্থ। এ অ্যান্টিবডি আমাদের দেহের শ্বেত রক্তকণিকা উৎপন্ন করে থাকে।

♦ টিকা, ভ্যাকসিন: টিকা, ভ্যাকসিন মানুষের দেহে বিশেষ বিশেষ রোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা অর্জন করতে সাহায্য করে।

♦ স্মৃতি কোষ: আমাদের দেহে কিছু স্মৃতি কোষ রয়েছে যা দেহের ক্ষতিকারক জীবাণুদের প্রকৃতি মনে রাখে।

♦ ইন্টারফেরন: ভাইরাসে আক্রান্ত কোষ থেকে ইন্টারফেরন নামক এক ধরনের বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ নি:সৃত হয়ে কোষকে রক্ষা করে।

♦ ভ্যাক্সিনেশন: বহিরাগত জীবাণু যেমন ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া ইত্যাদির সংক্রমন থেকে দেহকে রক্ষা করার উপায়কে ভ্যাক্সিনেশন বলে।

♦ সহজাত প্রতিরক্ষা: আমাদের দেহে জন্মগতভাবেই জীবাণুর বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকে, একে সহজাত প্রতিরক্ষা স্তর বলে।

জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

ড. মোহাম্মদ আবুল হাসান

গাজী সালাহউদ্দিন সিদ্দিকী